ঘটবে তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ, আবিষ্কার হবে মানুষের আয়ু বৃদ্ধির ওষুধ, জেনে নিন ৪৫০ বছর আগের ভবিষ্যৎবাণী

210

অনেকেই তার ভবিষ্যৎবানী একেবারেই বিশ্বাস করেন না। তারা বলেন, মানুষটি চিকিৎসক হয়েও ভ্রান্ত পথের পথিক, অবৈজ্ঞানিক দৃষ্টিভঙ্গির এক কুসংস্কারচ্ছন্ন জ্যোতিষী। আবার কেউ বলেন, সবজান্তা ফরাসি বুজরুক।অন্যদিকে বিশ্বের এক বিরাট অংশের গবেষকরা বলেন, এ পর্যন্ত যেসব ঘটনার সঙ্কেত দিয়েছেন, অক্ষরে অক্ষরে সেগুলো মিলে গেছে। তার বইয়ের বিভিন্ন ভাষার এডিশন বাজার থেকে হট কেকের মতো উড়ে যায়। সে কারণে ষোড়শ শতাব্দীর দুনিয়া কাঁপানো জ্যোতিষী নস্ট্রাদামুস আছেন এখনো সমহিমায়। মৃত্যুর ৪৫২ বছর পরও তার ভবিষ্যৎবাণীর টর্নেডোতে আজও তোলপাড় ডিজিটাল বিশ্ব।

ফ্রান্সের রাজা দ্বিতীয় হেনরির সময়কালের, ছোটখাটো চেহারার, প্রাণোচ্ছল ও লম্বা দাড়ির এই মজাদার মানুষটি কথার গুগলি দিতে ভালোবাসতেন। সাঙ্কেতিক ভাষায় বিভিন্ন ভবিষ্যৎবাণী করে তাক লাগিয়ে দিতেন সবাইকে। ফ্রান্সের রাজা দ্বিতীয় হেনরিকে নিয়ে নস্ট্রাদামুসের একটি ভবিষ্যৎবাণী তাকে রাতারাতি বিখ্যাত করে তোলে।১৫৫৫ সালে, রহস্যময় সাঙ্কেতিক ভাষায় তিনি বলেছিলেন, একজন অন্ধ মানুষ রাজা হবেন। মাত্র একবার লড়ে, জোয়ান সিংহ বুড়ো সিংহকে যুদ্ধক্ষেত্রে হারাবে। সোনার খাঁচার ভেতর তার চোখ ক্ষতিগ্রস্থ হবে। তারপর বুড়ো সিংহ মারা যাবে।

চার বছর পর, ১৫৫৯ সালের ১ জুন, রাজা যখন তার পার্ষদের সঙ্গে অসি যুদ্ধ অভ্যাস করছেন, তখন বিপক্ষের তরবারির তীক্ষ্ম ফলা রাজার সোনার হেলমেট ভেদ করে রাজার চোখে ঢুকে যায়। বিপক্ষে ছিলেন কাউন্ট অব মন্টোগোমারি, তিনি বয়সে রাজার চেয়ে অনেক ছোটো। আহত হওয়ার পর ১০দিন ভুগে ফ্রান্সের রাজা মারা যান। মিলে যায় নস্ট্রাদামুসের ভবিষ্যৎবাণী। নস্ট্রাদামুসের বই লেস প্রফেসিস ১৫৫৫ সালে প্রকাশিত হয়। এই বই তাকে বিশ্বখ্যাত করে দেয়। ১৫৫৫ থেকে ১৫৫৭ এই তিন বছরে, চার বা ছয় লাইনের অন্তমিলহীন সাঙ্কেতিক কবিতায়, আগামী ৩৭৯৭ সাল পর্যন্ত, প্রতিবছর বিশ্বে কী কী ঘটনা ঘটবে নস্ট্রাদামুস তার ভবিষ্যৎবাণী করে গেছেন।

সমকালীন ফরাসি ভাষায় লেখা হলেও সাঙ্কেতিক কবিতাগুলোর মধ্যে ইতালীয়, গ্রিক, হিব্রু ও ল্যাটিন শব্দ পাওয়া গেছে। তার বইয়ে নস্ট্রাদামুস পৃথিবীর শেষ দিনটির বিষয়েও ভবিষ্যৎবাণী করেছেন। শেষের সেই দিনে পৃথিবী জুড়ে মহাপ্লাবন আসবে। সেই মহাপ্লাবনের পরে আসবে ধূমকেতুর ঝড়। সেই ঝড়ে ধ্বংস হবে পৃথিবী। কিন্তু মহা প্রলয়ের পরে কী হবে, সে বিষয়ে নস্ট্রাদামুস নিরুত্তর। অবশ্য কিছুটা সময় দিয়ে গেছেন। সেই দিন আসতে এখনও পাঁচ হাজার বছর দেরি।নস্ট্রাদামুসের বহু ভবিষ্যৎবাণী নাকি মিলে গেছে। নস্ট্রাদামুস নাকি মিলিয়ে দিয়েছিলেন নেপোলিয়নের উত্থানের ইতিহাস। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ, হিটলারের উত্থান ও পতন, জন এফ কেনেডি হত্যা, চাঁদে মানুষের পদার্পণ, উপসাগরীয় যুদ্ধ, সাদ্দামের উত্থান ও পতন, এমনকি ৯/১১ এর ঘটনাও নাকি তার বইতে তিনি লিখে গেছেন।

নস্ট্রাদামুসের লেখা একটি কবিতায় ‘আকাশে আগুন‘, ‘সেই নতুন শহর‘, ‘বিশাল বজ্রপাত’, ‘দুই ভাই মুচড়ে যাবে’ প্রভৃতি শব্দ-বন্ধ ব্যাখ্যা করেন বেশ কিছু গবেষক। তারা বলেছেন নস্ট্রাদামুস ৯/১১ বা নিউইয়র্কের ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টারে জঙ্গিদের বিমান হানা ও টুইন টাওয়ারের ধূলিস্যাৎ হওয়ার ভবিষ্যৎবাণী করে গেছেন। নিজের মৃত্যু নিয়েও ভবিষ্যৎবাণী করে গেছেন নস্ট্রাদামুস। তিনি বলেছিলেন, আমাকে টেবিল আর বিছানার মাঝে মৃত অবস্থায় পাবে। সত্যিই আর্থারাইটিস রোগাক্রান্ত নস্ট্রাদামুসকে এক দিন সন্ধ্যায় মৃত অবস্থায় পাওয়া যায় তার শোবার ঘরের টেবিলের পাশে।

২০১৯ ও ২০২০ সাল নিয়ে নস্ট্রাদামুস যেসব ভবিষ্যৎবাণী করেছিলেন

১. ইউরোপের কিছু দেশে ভয়ঙ্কর বন্যা হবে। সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্থ হবে হাঙ্গেরি, ইতালি, চেক রিপাবলিক ও গ্রেট ব্রিটেন।

২. ইউরোপীয় দেশগুলো ও যুক্তরাষ্ট্রকে শরণার্থীদের স্রোত সামাল দিতে হবে। সন্ত্রাসবাদী হামলার সংখ্যা বাড়বে।

৩. মধ্যপ্রাচ্যে নতুন করে ধর্মীয় মৌলবাদ মাথাচাড়া দেবে। নতুন করে যুদ্ধ শুরু হবে। ফলে দেশ ছেড়ে মানুষ ইউরোপে ঢোকার চেষ্টা করবে।

৪. আবহাওয়া পরিবর্তন পৃথিবীর ওপর ব্যাপক প্রভাব ফেলবে। রাজনৈতিক নেতারা বায়ু দূষনকারী পদার্থগুলো বাতাসে কম ছাড়ার ব্যাপারে সহমত হবেন।

৫. ভয়ঙ্কর সাইক্লোনের সম্মুখীন হবে যুক্তরাষ্ট্র। অনেক জায়গার ভূগোল পাল্টে যাবে। ফ্লোরিডা, টেক্সাস ও নিউ অর্লিয়েন্স সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্থ হবে। বিশ্ব উষ্ণায়ন বিশ্বে সশস্ত্র সংঘাত ডেকে আনবে। চীন একটি কৌশলি চাল খেলে পৃথিবীর নতুন নেতা হবে।

৬. খ্রিস্টান ধর্মগুরুর আকস্মিক মৃত্যুর পর শুরু হবে তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ এবং চলবে ২৭ বছর।

৭. যুক্তরাষ্ট্রে পাঁচশ মাইল জুড়ে ভয়াবহ ভূমিকম্প হবে। যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়া থেকে কানাডার ভ্যাঙ্কুভার পর্যন্ত এলাকা এই ভূমিকম্পের অভিঘাতে বিদ্ধস্ত হবে।

৮. মানুষ পশুদের সঙ্গে কথা বলার পদ্ধতি আবিষ্কার করবে। পশুরা মানুষের আরো ঘনিষ্ঠ হবে।

৯. মানুষের আয়ু বৃদ্ধি করার ওষুধ আবিষ্কার হবে। মানুষ সেই ওষুধ খেয়ে দু’শ বছর পর্যন্ত বাঁচতে পারবে।